৩৭ বছরেও কাজে আসেনি রৌমারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অর্ধ কোটি টাকার ৪টি এক্স-রে মেশিন।

0
35

এলাহী শাহরিয়ার নাজিম
রৌমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধিঃ

রৌমারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অর্ধ কোটি টাকার ৪টি এক্স-রে মেশিন আসছেনা জনগনের কোন কাজে। মেশিন ৪টি হাসপালে আছে কি না তা নিয়েও মানুষের মনে ধুয়াসা রয়েছে। রৌমারী উপজেলা বাসীর চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৯৮৩ সালে ৫০ এম এম একটি এক্স-রে মেশিন, ১৯৯৬ সালে ৩০০ এম এম একটি এক্স-রে মেশিন,২০২০ সালে ২৪ আগষ্ট একটি এক্স -রে আর-ওয়াই-৭৯৯-২০০এম এম একটি এক্স-রে মেশিন ও ২০ সেপ্টেম্বর ২০২০ সালে এক্স-রে আর-ওয়াই ৯২১- ৩০০ এম এম এক্স-রে মেশিন গুলি বরাদ্দ দেওয়া হয়। এক্স-রে মেশিন ৪টির আনুমানিক সরকারী মূল্য অর্ধ কোটি টাকার উপরে।
রৌমারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৩ ও ১৯৯৬ সালে ২টি এক্স-রে মেশিন এলাকার হতদরীদ্র মানুষের চিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য সরবরাহ করা হয়েছে। ২০২২ সাল পর্যন্ত ৩৭ বছর অতিবাহিত হলেও জনবলের অভাবে চালু করা হয়নি এক্স-রে মেশিন। এতে এ এলাকার হতদরিদ্র মানুষ চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত। এদিকে ২০২০ সালে ২৪ আগষ্ট আবারো এক্স-আর- ওয়াই-৭৯৯-২০০ এম এম ও ২০২০ সালের ২০ সেপ্টেম্বর আর একটি এক্স-আর- ওয়াই ৯২১-৩০০ এম এম এক্স-রে ২টি মেশিন রৌমারী হাসপাতালে সরবরাহ করা হয়। দুঃখ জনক হলেও সত্য, যেখানে সরকার মানুষের স্বাস্থ্য-সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিনা মূল্যে ঔষুধ ও পরীক্ষা নিরিক্ষার জন্য সকল যন্ত্রাংশ সরবরাহ করেছে। সেখানে যুগযুগ ধরে স্বাস্থ্যসেবায় ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি-এক্স-রে মেশিন ব্যাবহার না করে ষ্টোরে তালাবদ্ধ রেখে আবার হারানোর অভিযোগে লোপাটে মেতে উঠেছেন হাসপাতাল কতৃপক্ষ।
উল্লেখ্যঃ রৌমারী ১৫টি নদ-নদী, চরাঞ্চল ভারতীয় সীমান্ত ঘেষা ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন অঞ্চল। এখানকার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত। খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলা উপজেলার একমাত্র স্বাস্থ্য কমপেক্সের উপর স্বাস্থ্যসেবার জন্য নির্ভরশীল। এখানে হাসপাতাল কতৃপক্ষের গাফেলতির কারণে হাজার হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত। সেই সাথে চিকিৎসা নিতে আসা অসুস্থ্য রোগীরা ঔষধ না পাওয়ার বিরম্বনাও রয়েছে। যেখানে অর্ধ কোটি টাকা মূল্যের ৪টি এক্স-রে মেশিন জনগণের কোন কাজে আসছেনা। স্বাস্থ্য খাত যেন অভিভাবকহীন, নেই কোন জবাব দিহিতা। প্রায় বছর খানেক আগে রৌমারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে জানালা ভেঙ্গে এক্স-রে মেশিনের যন্ত্রাংশ চুড়ি হয়েছে মর্মে রৌমারী হাসপাতালের কর্মকর্তা ডাক্তার আসাদুজ্জামান রৌমারী থানায় একটি জিডি করেন। জিডি করার প্রায় ১ বছর পর ৮ আগষ্ট ২০২২ রৌমারী হাসপাতালের প: প: কর্মকর্তা ডাক্তার আসাদুজ্জামানকে প্রধান করে ৪ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি রৌমারী হাসপাতালে এক্স-রে মেশিনের চুরি যাওয়া যন্ত্রাংশ তদন্ত করেন। এব্যাপারে সাংবাদিকবৃন্দ আসাদুজ্জামানের নিকট এক্স-রে মেশিন ৪টি দেখতে চান। আসাদুজ্জামান ৪টি মেশিন না দেখিয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ১টি মেশিনকে ৪টি বুঝাতে চেষ্টা করে। সাংবাদিকরা শক্ত করে ধরলে তিনি পাশ কাটিয়ে চলে যান। তবে অনেকে ধারনা করছে এক্স-রে মেশিনের যন্ত্রাংশ চুরি যাওয়া নয়, সরিয়ে ফেলানো হয়েছে।
রৌমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাক্তার আসাদুজ্জামানকে জিজ্ঞাস করলে তিনি জানান, আপনাদেরকে তো মেশিন গুলি দেখালাম। আর একটি মেশিন উপরে রয়েছে যাহা রুমের ভেতরে প্যাক করা অবস্থায়। এটা আগে দেখানো যাবে না। আগামী দিন মেশিন চুরি যাওয়া তদন্ত টিম আসবে, তখন আপনাদেরকে ডাকা হবে। কিন্তু তদন্ত টিম আসলেও সাংবাদিকদেরকে না ডেকে তারাহুড়া করে তদন্ত শেষ করে চলে যাওয়ার সময় সাংবাদিকরা উপস্থিত হন। তদন্ত কমিটির আহবায়ক ডাক্তার আসাদুজ্জামানের নিকট চুরি যাওয়া মেশিনের কথা জিজ্ঞাসা করলে তিনি পাশ কাটিয়ে যান।