সাভারে সেতু পেষ্টিসাইডস লিঃ এ রহস্যময় চুরির ঘটনায়, কর্মকর্তা সহ আটক চার!!

0
19
মোঃসোহান আহমেদ সানাউল
বাংলার রূপ, নিজস্ব প্রতিবেদক:
ঢাকার সাভারে একটি কিটনাশক সার কারখানায় চুরির ঘটনা ঘটেছে।তবে রহস্য জনক হলেও সত‍্য ঘটনার এক মাস তেইশদিন পরে থানায় মামলা  দায়ের করা হয়েছে।ইতি মধ‍্যে মামলায়  তিন কর্মকর্তা সহ চারজনকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার (৫ নভেম্বর) সাভারের হেমায়েতপুর যাদুরচর এলাকার সেতু পেষ্টিসাইডস লিঃ এ কর্মরত একজন ইলেক্ট্রিশিয়ান সহ আরও তিন কর্মকর্তাকে সাত লক্ষ সাতচল্লিশ হাজার সাতশত একত্রিশ টাকা  চুরির অভিযোগে গ্রেফতার করে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
গ্রেফতার ওই চার অভিযুক্ত হলেন- সেতু পেষ্টিসাইডস লিঃ এর ট্রান্সপোর্ট অফিসার নাসির (৩০), ইলেক্ট্রিশিয়ান খাইরুল ইসলাম, সিকিউরিটি সুপারভাইজার বেনজির আহমেদ ও সিকিউরিটি সুপারভাইজার মোঃ জিয়াউল হাসান। এই কোম্পানির সিনিয়র এক্সিকিউটিভ (হিসাব) মোঃ হুমায়ুন কবির বাদী হয়ে এই চারজনের বিরুদ্ধে চুরির ঘটনার দীর্ঘ ৫৩ দিন পর লিখিত অভিযোগ করলে পুলিশ গত ৫ নভেম্বর, ২০২০ তারিখে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করে।
সাভার মডেল থানায় বাদীর এজাহার থেকে জানা যায়, বাদী কোম্পানীর প্রয়োজনে গত ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২০ তারিখে চেকের মাধ্যমে ব্র‍্যাক ব্যাংক থেকে মোট ৭,৩৯,১৫৩ টাকা উত্তোলন করে অফিস ব্লিডিং এর ২য় তলায় হিসাব রক্ষক রুমে লকারে রাখেন। পরবর্তীতে কোম্পানীর সর্বমোট ৭,৪৭,৭৩১ টাকা লকারে রেখে তিনি বিকাল ৫ঃ২০ ঘটিকায় অফিস ত্যাগ করেন।  পরে গত ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২০ তারিখ (শনিবার) সকালে অফিসে প্রবেশ করে দেখতে পান যে লকারের তালা ভাঙ্গা, জানালার গ্রীল কাটা এবং লকারের ভিতর থেকে সমস্ত টাকা উধাও। পরে কারখানা ম্যানেজার সহ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেন।
এজাহারে বাদী আরও জানান যে, অভিযুক্ত চারজনই বিভিন্ন কাজে রাত্রি অধিক সময় পর্যন্ত অফিস এবং কোম্পানির ভিতরে অবস্থান করে কাজ করে থাকে এবং গত ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২০ তারিখেও তারা অধিক রাত্রি পর্যন্ত কোম্পানীর ভিতরে কাজ করেছে ও ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনের খবরও তারা জানতো। এছাড়া এই টাকা চুরির ব্যাপারে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা কোনো সদুত্তর দিতে পারে নাই বিধায় সন্দেহভাজন চোর হিসেবে তাদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন বাদী।
তবে এব্যাপারে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন চালাতে ওই কারখানায় গিয়ে সরেজমিন দেখা যায়, যেস্থানের জানালার কাঁচ ও গ্রীল ভেঙ্গে চোর ঢুকেছে, তার দিকে মুখ করেই রয়েছে ক্লোজ-সার্কিট ক্যামেরা। তবে রহস্যময় বিষয় হলো, যেদিন চুরি হয়েছে বলে বাদী এজাহারে উল্লেখ করেছেন, সেইদিনই সিসি ক্যামেরা বন্ধ ছিলো। এখানে উল্লেখ্য, এর কন্ট্রোল রুম সরাসরি কারখানাটির প্রধান কার্যালয়ে। আরেকটি বিষয় হলো, লকারের চাবি এবং লকার রুমের চাবি থাকে সিনিয়র এক্সিকিউটিভ (হিসাব) মোঃ হুমায়ুন কবির এর কাছে, তার দায়িত্বে টাকা থাকাবস্থায় চুরি সংঘটিত হয়েছে, অথচ কোম্পানির কারখানা ম্যানেজার সহ আরও উর্ধতন কর্তৃপক্ষ থাকার পরও মামলার বাদী হয়েছেন মোঃ হুমায়ুন কবির!
মুঠোফোনে এবিষয়টি উল্লেখ করে মামলার ২নং অভিযুক্ত খাইরুল ইসলাম এর স্ত্রী অভিযোগ করেন যে, সিনিয়র এক্সিকিউটিভ (হিসাব) মোঃ হুমায়ুন কবির নিজেই টাকা সরিয়ে এখন মিথ্যা নাটক সাজিয়ে তার স্বামীকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। মামলার আসামী তো সে হবে সবার আগে, অথচ দুঃখের ব্যাপার তিনিই এই মামলার বাদী। প্রসঙ্গক্রমে তিনি আরও জানান যে, চুরির ঘটনার দিন তার স্বামী রাত ৯টায় অফিসের কাজ শেষ করে বাসায় চলে আসেন।
এছাড়া, কয়েকজন সিকিউরিটি এই প্রতিবেদকের নিকট ভিডিও বক্তব্যে জানান, যে জায়গা দিয়ে হিসাব রক্ষক এর রুমে প্রবেশ করা হয়েছে, একজন মানুষের পক্ষে প্রবেশ করা খুবই দুঃসাধ্য। আর যে রাতে চুরি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে, সেই রাতে অভিযুক্ত চারজনের ভিতরে মাত্র একজন সিকিউরিটি সুপারভাইজার ছিলেন, বাকীরা সেই রাতে অবস্থান করেন নাই।
সরেজমিন আরও দেখা যায়,  হিসাব রক্ষক এর রুমে যে কাউকে প্রবেশ করতে হলে কয়েকটি গেট পার হতে হবে এবং কর্তব্যরত সিকিউরিটিদের নজর এড়িয়ে কেউ সেখানে যেতে পারবে না। এপ্রসঙ্গে তারা আরও জানান যে, অভিযুক্তদের কাউকে তারা চুরি করতে দেখেন নাই।
এব্যাপারে মুঠোফোনে সেতু পেষ্টিসাইডস লিঃ এর কারখানা ম্যানেজার নজরুল ইসলাম চুরির বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, অভিযোগটি নিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা সুজন সাহেব তদন্ত করছেন।
আর যেদিন চুরি হয় সেদিন সকল সিসি ক্যামেরা বন্ধ থাকার ব্যাপারে তিনি জানান, মূলত আমাদের হেড অফিস থেকেই সিসি ক্যামেরা নিয়ন্ত্রণ করা হয়, আর দূর্ভাগ্যজনকভাবে ওই দুইদিন সিসি ক্যামেরা বন্ধ ছিলো।
মুঠোফোনে এব্যাপারে মামলার বাদীকে আরও উর্ধতন কর্তৃপক্ষ থাকার পরেও তিনি কথা ভাবে মামলার বাদী হলেন এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি জানান, তিনি কারখানা কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অনুসারেই কাজ করছেন।
এব্যাপারে এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সাভার মডেল থানাধীন ট্যানারি পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক সুজন শিকদার জানান, লিখিত অভিযোগ পেয়ে অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। আরও অধিকতর তদন্ত চলছে এবং আসল ঘটনা দ্রুত উদঘাটন করা হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here