খোরশেদ আলম
(রূপগঞ্জ) নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধিঃ
দেশে চলছে করোনা তৃতীয় ঢেউ মোকাবেলায় কঠোর লক ডাউন। কঠোর লক ডাউনে ও কোনো ভাবেই নিয়ন্ত্রণে আসছে আক্র্যান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। এর মধ্যে হঠাৎ করেই বেরেছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। শহর ও পৌরসভার মধ্যে ডেঙ্গু নিধনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলেও উপজেলার ইউনিয়ন গুলোতে তেমন কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় না।তাই জনমনে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। আর এ জন্য ইউনিয়নভুক্ত এলাকাগুলোতে মশক নিধনে কোন উদ্যোগ নেয়া হয় না। এ নিয়ে অন্য সময় তেমন আলোচনা না হলেও সম্প্রতি ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ায় চিন্তিত সাধারণ মানুষ।
রূপগঞ্জ সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু হোসেন রানু ভুইয়ার সাথে মোবাইল ফোনে কথা হয় আমাদের প্রতিবেদকের। তিনি জানান, মশক নিধনের জন্য ইউনিয়নে কোনো বরাদ্দ দেয়া হয় না। তাই আমরাও কিছু করতে পারছি না জনগনের জন্য। কেউ যদি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয় সেক্ষেত্রে আমরা তাদের চিকিৎস্যর ব্যয় বহন করবো। তিনি দাবি করেন, আমরা খোঁজ-খবর নিচ্ছি কেউ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে কি না।
সূত্র মতে, উপজেলায় ইউনিয়ন রয়েছে সাতটি। পৌরসভা রয়েছে ২টি। এসব ইউনিয়ন এলাকায় মানুষের বাস কম নয়। প্রতিটি ইউনিয়নে প্রতি বছর বাজেট হয়। সেই বাজেটে নানা উন্নয়ন কাজের জন্য বরাদ্দ থাকে। তা থেকে বছর জুড়ে খরচ হয়। ইউনিয়নগুলোর নিজস্ব তেমন একটা আয় নেই।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, এলজিএসপিসহ নানা প্রকল্পের মাধ্যমেও অর্থ পায়। এরপরও মশক নিধনের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে যুগ যুগ ধরে অবহেলিত হয়ে আসছে ইউনিয়ন এলাকায়। মশক নিধনে কোন প্রকার বরাদ্দ দেয়া হয় না আর চেয়ারম্যানরাও নিজস্ব আয় থেকে এ বিষয়ে কোন প্রকল্প পরিচালনা করে না। জেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, ইউনিয়ন এলাকায় মশক নিধনে সরকার থেকে কোন বরাদ্দ দেয়া হয় না। তবে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান চাইলে উপজেলা থেকে এ বিষয়ে বরাদ্দ নিতে পারে।
ডেঙ্গু মশার আতঙ্ক এখন শুধু ঢাকাতেই নয়, ছড়িয়ে পড়েছে গ্রামগঞ্জেও। গত কয়েকদিনে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন শতাধিক মানুষ। সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল এবং ক্লিনিকের রোগীদেরও রাখা হয়েছে মশারির ভেতরে। আর এ ডেঙ্গুর প্রভাব থেকে বাঁচতে মশারি ও কয়েল বিক্রির তৎপরতা দেখা গেছে। এছাড়াও মশা মারার স্প্রে, বৈদ্যুতিক ব্যাট (মসকিউটো র্যাকেট) কিনছে ক্রেতারা।
শনিবার উপজেলার মুড়াপাড়া বাজার এবং গাউছিয়া মার্কেট কায়েতপাড়া হাট বাজার এবং গত রোববার উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের বড়ালু বাজার, জাঙ্গীর কুদুর মার্কেট, বরুনা বাজার, বাঘবেড় বাজার, কাঞ্চন মশারী পল্লী, গোলাকান্দাইল হাট, উপজেলা সদরের বিপনিবিতানসহ বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে বিক্রির এমন দৃশ্য দেখা যায়। বিশেষ করে যাদের পরিবারে শিশু ও বৃদ্ধ রয়েছে তাদের একটু বেশি সতর্কতা লক্ষ্য করা গেছে। উপজেলার মুড়াপাড়া বাজারে কয়েকটি মশারির দোকানে সরেজমিন দেখা যায়, আগের তুলনায় বিক্রেতাদের ব্যবসা জমজমাট। আগে যদি দৈনিক পাঁচটি মশারি বিক্রি হতো, সেখানে এখন বিক্রি হচ্ছে ৪০/ ৫০টি। আর খুচরা পর্যায়ে দামও একটু বেশি নিচ্ছে বলে অভিযোগ অভিযোগ করেন ক্রেতারা। উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের নগরপাড়া এলাকার নজরুল ইসলাম জানান, যে মশারি আগে ২০০ টাকায় বিক্রি করা হতো এখন সেগুলো বিক্রি হচ্ছে ৪০০/ ৫০০টাকায়। মুড়াপাড়া ইউনিয়নের গঙ্গানগর এলাকার আর এক ক্রেতা জহিরুল ইসলাম বলেন, রাতে ঘুমাতে গেলে খুব ভয় হয়। কোন সময় কোন দিকে এডিস মশা কামড়ে দেয় তার কোনো গ্যারান্টি নেই। মশারি কেনার আগে দুপুরে ঘুমাতাম না আর আজকের পর থেকে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারবো।
মশারি বিক্রেতা মোশারফ হোসেন জানান, ডেঙ্গু এবং চিকুনগুনিয়া আতঙ্কে মানুষ এখন মশারির দিকে আগ্রহী হচ্ছে। আগে দৈনিক পাঁচটি মশারি বিক্রি করলেও এখন বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫টা। তার জন্যে আমরাও পর্যাপ্ত মশারি স্টকে রেখেছি। চনপাড়া মোড় এলাকায় দেখা গেছে, সব ব্র্যান্ডের মশা মারার স্প্রে ও কয়েলের গ্রাহক দেখা গেছে চোখে পড়ার মতো। প্রায় ১৫ মিনিটে দোকানে সাতজন ক্রেতা আসছে কয়েল আর স্প্রে কেনার জন্যে।
উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়র পরিষদের সচিব মো. রিয়াজ জানান, মশক নিধনের জন্য সরকার থেকে কোন বরাদ্দ দেয়া হয় না। সরকার থেকে বরাদ্দ দেয়া হয়নি তবে, এ বিষয়ে আমাদের মিটিং হবে। কিভাবে মশক নিধন করা যায় সে বিষয়ে দিক নির্দেশনা সেই সাথে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দেয়া হবে। সবকিছু ঠিক থাকলে আশা করি খুব শীঘ্রই আমরা মশক নিধন করতে পারবো। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা গেলে এর দায়ভার কে নেবে তা আমার জানা নেই।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ জানান, মশক নিধনে ইউনিয়নগুলোতে সরকার থেকে কোন বরাদ্দ দেয়া হয় না ঠিকই। তবে ইউনিয়ন পরিষদ চাইলে উপজেলা থেকে বরাদ্দ নিতে পারে।