খোরশেদ আলম,
রূপগঞ্জ নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি:
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে পূর্বাচল উপশহরের একটি মসজিদের জমি বরাদ্দ নিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। জমিটি বরাদ্দ নিতে দুটি আলাদা পক্ষ দখল পাল্টা দখল চালাচ্ছে। এ নিয়ে চলছে উত্তেজনা। সেখানে রক্তক্ষয়ী সংঘাতের আশংকা করছেন স্থানীয়রা। উপজেলার দাউদপুর ইউনিয়নের পূর্বাচল নতুন শহরের ২১ নং সেক্টরের রঘুরামপুর এলাকায় তৈরী হয়েছে এ উত্তেজনা।
প্রস্তাবিত রঘুরামপুর ফুলবাড়িয়া জামে মসজিদের মুতাওয়াল্লী আমির হোসেন জানান, পূর্বাচল উপশহরের জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়ায় দাউদপুর ইউনিয়নের রঘুরামপুর গ্রামের সামাজিক ওয়াকফাকৃত মসজিদের জমি ও পার্শবর্তি ফুলবাড়িয়া গ্রামের মসজিদের জমিও অধিগ্রহণ করে রাজউক। ১৯৬১ সালে ৬৪৬৩ নং দলিল মুলে রঘুরামপুর এলাকার প্রয়াত সৈয়দ হোসেন ১০ শতাংশ জমি দান করেন এই মসজিদের জন্য। অপরদিকে পার্শ্ববর্তী
ফুলবাড়িয়া এলাকায়ও দান করা জমিতে গড়ে উঠে আরেকটি মসজিদ। রাজউক অধিগ্রহণের পর সেসব জমির বিনিময়ে সে এলাকায় প্লট বরাদ্দ পাওয়া মুসলিম আদিবাসী ও বাসিন্দাদের জন্য সেখানকার ১১১ ও ২২৪ নাম্বার রোডে ২৭ কাঠার ৩ ও ৩/এ নাম্বার প্লটটি মসজিদের জন্য বরাদ্দ করেন তারা। এতে সামাজের মুসুল্লীরা খুশি হলে গত ২০১৯ সালে জৈনক মজিবর রহমান মোল্লা বাগরাইয়াটেক ত্বাকওয়া জামে মসজিদ নাম দিয়ে প্লটটি নিজ দখলে নেন।
তার দাবি রাজউক তাকে মৌখিকভাবে এই প্লট বুঝিয়ে দিয়েছেন। তিনি সেখানে একটি আধাপাকা ইমারত নির্মান করে হাফেজিয়া মাদ্রাসা ও মসজিদ চালাচ্ছেন। রঘুরামপুর জামে মসজিদের সভাপতি আলহাজ্ব সহিনুদ্দিন মিয়া, সাধারন সম্পাদক জিয়ানুদ্দিন মালুম, কোষাধ্যক্ষ সাইফুল, সাবেক সভাপতি আমির উদ্দিন খান, সমাজের মুসুল্লী আব্দুর রউফ মালুম, আরমান মিয়া, তাইজুদ্দিন, মজিবু্র রহমান খান, ফুলবাড়িয়া জামে মসজিদের সভাপতি আফাজউদ্দিন, সাধারন সম্পাদক এডভোকেট নজরুল, কোষাধ্যক্ষ আব্দুল কাইয়ুম, আবু হানিফাসহ আরও অনেকে জানায়,পূর্বাচল আন্তর্জাতিক বানিজ্য মেলার পাশে লেকপাড়ে মনোরম পরিবেশে মসজিদের জন্য ২৭ কাঠার প্লট বরাদ্দ হয়। সমাজবাসী এমন আকর্ষনীয় মসজিদের প্লট বরাদ্দে অত্যন্ত আনন্দিত ছিল। কিন্ত রাজউকের সাবেক নিম্মমান সহকারী পদে চাকুরি করা পার্শ্ববর্তী ৬নং সেক্টরের বাগরাইয়াটেক এলাকার মজিবর রহমান মোল্লা সে এলাকায় ‘বাগরাইয়াটেক জামে মসজিদ’ এর জন্য প্লট ৫ নং সেক্টরের ১০৪ নাম্বার রোডের ২ নং প্লটটি বরাদ্দ পাবার পরও একই নামে কেবল ত্বাকওয়া শব্দ যুক্ত করে আরেকটি প্লট নেয়ার পায়তারা করছেন।
দখলের প্রক্রিয়ায় সে সেখানে মাদ্রাসা স্থাপন করে ব্যবসা করছেন। কাগজে যা মসজিদের জমিএবং এটা একমাত্র সমাজবাসীর প্রাপ্য। তারা আরও জানায়, মজিবর মোল্লা অসৎ এবং দূর্ণীতিগ্রস্ত কর্মচারী হওয়ায় ২০০৭ সালে রাজউক থেকে চাকুরিচ্যুত হয়। প্লট হাতিয়ে নেয়ার কলাকৌশল জানে বলেই একটি প্লট বরাদ্দ পাবার পরও আরেকটি প্লট হাতিয়ে নেয়ার কৌশল চালাচ্ছে সে। তাই আমরা তাকে উচ্ছেদ করে বর্তমানে সেখানে রঘুরামপুর ফুলবাড়িয়া জামে মসজিদ স্থাপন করেছি।
এদিকে সরজমিনে সেখানে গিয়ে দেখা দেখে মসজিদের জন্য বরাদ্দকৃত ২৭ কাটার প্লটটি মাঝখানে বাশ দিয়ে ব্যারিকেট তৈরী করে মসজিদসহ একটি অংশ দখলে রেখেছে এলাকাবাসী। অপরদিকে অপর অংশটি মজিবর রহমান দখলে নিয়ে সেখানে মাদ্রাসা চালাচ্ছেন।
এ ব্যাপারে মজিবর রহমান মোল্লার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বাগরাইয়াটেক যে মসজিদটি বরাদ্দ পেয়েছি সেটা আমাদের সামাজিক প্রতিষ্ঠান কিন্ত রঘুরামপুর মৌজায় আরএস ৩৬০ এবং ৩৬১ নং দাগে ৭৯ শতাংশ এবং ব্রাক্ষ্মনখালী মৌজায় আরএস ২২১ নং দাগে ৩ শতাংশ জমি কবুলিয়াত নামা দলিল, না দাবি দলিল ও ওয়াকফাকৃত দলিলে আমরা মালিক ছিলাম।
সেখানে আমাদের পারিবারিক কবরস্থান, মসজিদ ও মাদ্রাসা ছিল। এর বিনিময়ে রাজউক আমাকে এই জমি বুঝিয়ে দিয়েছে। এখন রাজউক যদি মনে করে আমাকে অন্যত্র দেয়া উচিত সেটাও আমি মেনে নিবো। আমি কোন সংঘাত চাইনা। আর আমি কোন দূর্ণীতিগ্রস্ত ব্যক্তি হয়। দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শাসন আমলে ২০০৭ সালে আমি ওএসডি হয়েছিলাম। পরে বর্তমান সরকার আমাকে চাকুরিতে পূর্ণবহাল করেছে।
এ ব্যাপারে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ( রাজউক)এর পূর্বাচলের প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম বলেন, মসজিদ নিয়ে জটিলতার ব্যাপারে আমাদের কাছে অভিযোগ এসেছে। সেখানে আমরা কাউকেই এখন অবধি বরাদ্দ দেয়নি। বিষয়টি গভীরভাবে তদন্ত করে যে পক্ষ বরাদ্দ পাবার যোগ্য তাকেই আমরা এই প্লট বরাদ্দ দিবো।