মোঃ সোহান আহমেদ সানাউল।
নিজস্ব প্রতিবেদক,বাংলার রুপ।।
ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযানে কাশিমপুর থানাধীন ২নং ওয়ার্ডের লতিফপুর এলাকায় ২৫ শত বাসাবাড়ির অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছেন তিতাস কতৃপক্ষ।
বৃহস্পতিবার (১২ মার্চ) সকাল থেকে শুরু হওয়া অভিযানের নেতৃত্ব দেন গাজীপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হারুন অর রশিদ। বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এসময় দুইজন বাড়িওয়ালাকে অবৈধ গ্যাস সংযোগ গ্রহনের জন্য বাংলাদেশ গ্যাস আইনে একজনকে ২ লক্ষ টাকা ও অপরজনকে ১ লক্ষ টাকা করে মোট ৩ লক্ষ টাকা জরিমানা করে এবং তাতক্ষণিক জরিমানার টাকা আদায় করেন।
তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড এর সাভার জোনাল বিপনন অফিসের (জোবিঅ )এর ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী আবু সাদাত মোঃ সায়েম এর উপস্থিতিতে
পরিচালিত অভিযানে আনুমানিক ২ কিলোমিটার ব্যাপী অবৈধ বিতরণ লাইন তুলে ফেলা সহ অবৈধ সংযোগ কাজে ব্যবহৃত পাইপ ও রাইজারগুলিও খুলে জব্দ করা হয়।
অভিযানে এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন- তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড এর সাভার জোনাল বিপনন অফিস (জোবিঅ) এর উপ-ব্যবস্থাপক আমিরুল ইসলাম, উপ-ব্যবস্থাপক আনিসুজ্জামান, উপ-ব্যবস্থাপক আব্দুল মান্নান, সহ-ব্যবস্থাপক সাকিব বিন আব্দুল হান্নান প্রমুখ সহ তিতাসের কারিগরি টিমের শ্রমিকগণ।
অভিযানের ব্যাপারে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড এর সাভার জোনাল বিপনন অফিস এর ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী আবু সাদাত মোঃ সায়েম জানান, আমরা কাশিমপুরের ২নং ওয়ার্ডের লতিফপুর এলাকায় অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণ অভিযান পরিচালনা করেছি।
এখানে অবৈধ সংযোগকারীরা আমাদের হাই-প্রেসার বৈধ বিতরণ লাইন থেকে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে নিম্নমানের পাইপ ও ফিটিংস ব্যবহার করে ২ ইঞ্চি ও ১ ইঞ্চি লাইনের মাধ্যমে অনেক দীর্ঘ সংযোগ নিয়েছে। এটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ এবং জানমালের ক্ষতির সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা আজ এই সম্পূর্ণ অবৈধ লাইন উচ্ছেদের চেষ্টা করেছি। তাতে আনুমানিক ২ কিলোমিটার লাইন বিচ্ছিন্ন হয়েছে এবং এতে প্রায় ২৫ শত বাসাবাড়িতে নেয়া অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে।
তিনি জানান, এই এলাকায় ইতোপূর্বে আমরা কয়েকবার উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছি। যারা এসব অবৈধ সংযোগ প্রদান করেছে, তাদের ব্যাপারে আমরা তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করছি। বাংলাদেশ গ্যাস আইনে তাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা দায়ের করা হবে।
সরেজমিন এলাকায় তথ্য সংগ্রহকালে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়রা জানান, স্থানীয় ২ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোন্তাজ উদ্দিন মন্ডল ও তার দুই ভাই এন্তাজ ও তাইজউদ্দিন এর মালিকানাধীন কলোনিগুলিতে অবৈধ গ্যাস সংযোগ রয়েছে। আর কাউন্সিলরের ভাগিনা সানজিদ এই অবৈধ গ্যাস সংযোগ প্রদানের সাথে জড়িত।
এব্যাপারে, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোন্তাজ উদ্দিন মন্ডলের অফিস কক্ষে তিতাস কর্তৃপক্ষ ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এর উপস্থিতিতে এই অবৈধ গ্যাস সংযোগ প্রদানকারীদের নাম জানতে চাইলে তিনি কয়েকজনের নাম বলেন। তারা হলেন- মোঃ সোহেল, পিতা- মোঃ আনোয়ার হোসেন, মোঃ ফারুক ও মোঃ জাহিদ। এসময় কাউন্সিলর আরও জানান যে, তিনি সহ তার চাচাতো ভাই মোশাররফ হোসেন, মোঃ মুনির হোসেন,শরিফ হোসেন এবং তার আপন ভাই এন্তাজউদ্দিন ও তাইজউদ্দিন এর কলোনিতে কিছু অবৈধ সংযোগ থাকতে পারে। এসময় বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এর নিকট কাউন্সিলর দুই দিন সময় চান এসব অবৈধ সংযোগ নিজেই বিচ্ছিন্ন করবেন বলে কমিটমেন্ট করেন।
এদিকে, মোঃ নুরু হক মেম্বার যিনি স্থানীয় কাউন্সিলরের মোন্তাজউদ্দিনের ভগ্নিপতি , তার নিকট ১০ লক্ষ টাকা গ্যাসের বকেয়া বিল থাকায় তার সংযোগ সাময়িক বন্ধ করা হয়। উল্লেখ্য, এই নুরু মেম্বার এর ছেলে সানজিদ যার বিরুদ্ধে অবৈধ গ্যাস সংযোগ প্রদানের অভিযোগ এর কথা তিতাস কর্তৃপক্ষের থেকেই জানা যায়।
প্রসঙ্গত, অভিযান চলাকালে ওই এলাকায় যেকোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে কাশিমপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এস আই) দিপঙ্কর রায় এর নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য উপস্থিত ছিলেন।