বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই শরণখোলার ৪০ মিটার বেড়িবাঁধ নদীগর্ভে বিলীন॥

0
9

মো:জাহানুর ইসলাম।

বাংলার রূপ,(বাগেরহাট)শরনখোলা প্রতিনিধি।।

বর্ষা মৌসুম ও অতিরিক্ত বৃষ্টি শুরু হওয়ার আগেই বাগেরহাটের শরণখোলা অংশে বেড়িবাঁধের কাজ শেষ না হওয়ায় ভাঙন শুরু হয়েছে। এতে স্থানীয়দের মাঝে ভয়াভহ আতঙ্ক বিরাজ করছে।

স্থানীয়রা বলছে, ওই স্থানে দ্রুত টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ না হলে শরণখোলা উপজেলার গাবতলা ও বগী দুই গ্রাম এই মৌসুমেই  নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।

ইতিধ্যে শুক্রবার (০৮ মে) সকালে শরণখোলা উপজেলার সাউথখালি ইউনিয়নের বলেশ্বর নদীর পাড়ের গাবতলা-বগী গ্রাম সংলগ্ন বাঁধের ৪০ মিটার নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়।

পরে খবর পেয়ে বেড়িবাঁধ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান উপকূলীয় বাঁধ নির্মান প্রকল্পের (সিইআইপি) কর্মকর্তারা ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। এবং গ্রামবাসিকে ভেঙে যাওয়া স্থানে জরুরি ভিত্তিতে একটি রিং বেড়িবাঁধ দেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন তারা।

স্থানীয় এক ভুক্তভোগী বলেন, বাব-দাদার জমি সব বলেশ্বর নদীর ভাঙনে চলে গেছে। সকালে হঠাৎ করে দুই বিঘা জমিসহ বেড়িবাঁধটি ভেঙে যায়। ভাঙনের কবলে পড়ে আমরা নিঃস্ব হয়ে গেছি। যত দ্রুত সম্ভব নদী শাসন করে এখানে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি জানান তিনি।

এছারাও আরও কয়েকজন বলেন, এখনও বেড়িবাঁধের অনেক জায়গায় ভাঙন রয়েছে। দ্রুত এ বাঁধ নির্মাণ না হলে আমাদের আর বাঁচার উপায় থাকবে না। দ্রুত সময়ের মধ্যে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে আমাদের বাঁচার ব্যবস্থা করে দিন।

স্থানীয় ইউপি সদস্য রিয়াদুল পঞ্চায়েত বলেন, সিডরের পরে আমাদের একটাই দাবি ছিল টেকসই বেড়িবাঁধ। শরণখোলাবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মান শুরু হয়। কিন্তু সব থেকে ঝুকিপূর্ণ বগী ও গাবতলা গ্রাম রয়ে যায় অরক্ষিত। নদী শাসন না করার কারণে এই দুই গ্রামের অংশের বেড়িবাঁধ বার বার ভেঙে যায়। প্রতি বছর বৃষ্টির মৌসুমে ভাঙলেও, এবার বর্ষ মৌসুম শুরূ হওয়ার আগেই ভাঙন শুরু হয়েছে। অতিদ্রুত এটার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে এলাকার জমি ও ঘরবাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।

এ বিষয়ে সিইআইপির প্রকৌশলী মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ভাঙনের খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। আকস্মিক ভাঙনে প্রায় ৪০ মিটার জায়গা জুড়ে নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব এই স্থানে একটি রিং বেড়িবাঁধ দেয়া হবে। রিং বেড়িবাঁধ দেয়ার পরে পূর্ণাঙ্গ টেকসই বাঁধ নির্মাণ কাজ শেষ করার আশা ব্যক্ত করেন তিনি।

২০০৭ সালে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্নিঝড় সিডরে উপকূলীয় জেলা বাগরহাট অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর মধ্যে জেলার শরণখোলা ও মোরেলগঞ্জ উপজেলার মানুষের সব থেকে বেশি জানমালের ক্ষতি হয়। তারপরে ঝড় ও জলচ্ছাস থেকে বাঁচতে এই দুই উপজেলাবাসীর একটাই দাবি ছিল টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ।

দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে সরকার গত ২০১৫ সালে উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্প (সিইআইপি) নামে একটি প্রকল্প হাতে নেয়। জমি অধিগ্রহণের পর ২০১৬ সালের ২৬ জানুয়ারি বেড়িবাঁধ ও স্লুইচগেট নির্মাণের কাজ শুরু হয়। ৬২ টি কিলোমিটার বেড়িবাাঁধের প্রায় –৬০ কিলোমিটার কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু নদী শাসন করে কাজ না করার কারণে শরণখোলা উপজেলার বগী ও গাবতলা গ্রামের পাশের প্রায় দুই কিলোমিটার অংশে নির্মানাধীণ বেড়িবাঁধে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে।

বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নাহিদুজ্জামান খান বলেম, ৩৫/১ পোল্ডারের অধিকাংশ কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। বগী ও গাবতলা এলাকার দুই কিলোমিটার অংশে নদী শাসন ও জমি অধিগ্রহণ জনিত কিছু সমস্যা রয়েছে। যার ফলে ওই স্থানে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ সম্ভব হচ্ছে না। তারপরেও আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি ওই স্থানে যাতে দ্রুত টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করার। ভাঙন কবলিত স্থানে শনিবার থেকে রিং বেড়িবাধ নির্মাণের কাজ শুরু হবে বলে জানান তিনি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here