চেঙ্গী প্রতিবেদক :
লাখ টাকার মোটর সাইকেলের জন্যই প্রাণ গেলো রাঙামাটির লংগদুর ভাড়ায় চালিত মোটর সাইকেল চালক ও লংগদু ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো: নুরুল ইসলাম নয়নের। গ্রেফতারকৃত দুই ঘাতক জুনেল চাকমা ও রনেল চাকমা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে এমনটাই জানিয়েছে।
নয়ন হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে রাঙামাটির লংগদু উপজেলার রাঙিপাড়া হেলিপ্যাড এলাকার জুনেল চাকমা ও খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার বাবুছড়া এলাকার রনেল চাকমা-কে আটকের পর তাদের দেয়া তথ্যমতে টানা চার ঘণ্টা অভিযান শেষে শনিবার খাগড়াছড়ির দীঘিনালার মাইনী নদী থেকে নৌবাহিনীর ডুবুরি দল ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা নয়নের ছিনতাই হওয়া মোটর সাইকেলটিও উদ্ধার করে।
অভিযান পরিচালনাকালে খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মো: আলী আহমদ খান, শহীদ মোয়াজ্জম নৌ ঘাটির লে: এম কবির হোসেন, খাগড়াচড়ির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এমএম সালাহউদ্দীন, পিবিআই চট্টগ্রাম বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: মাঈন উদ্দিন, দীঘিনালা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো: সামসুদ্দিন ভূইয়া, খাগড়াছড়ি সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তারেক মোহাম্মদ আব্দুল হান্নান, পিবিআই’র পরিদর্শক সন্তোষ চাকমা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
শনিবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে টানা চার ঘণ্টা অভিযান শেষে মোটরসাইকেল উদ্ধার হওয়ার পর বিকেল সোয়া ৪টার দিকে মাইনী নদীর তীরে দুই ঘাতককে গ্রেফতারসহ পুরো ঘটনা সম্পর্কে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মো: আলী আহাম্মদ খান।
এর আগে গতকাল শুক্রবার সকালে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী এলাকা থেকে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) জুনেল চাকমাকে আটক করে। পরে তার দেওয়া তথ্য মতে একই দিন বিকেল দীঘিনালা থেকে অপর ঘাতক রনেল চাকমাকে আটক করা হয়। এরপর উভয়ের দেওয়া তথ্যে নয়নের ব্যবহার করা ছিনতাই হওয়া মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয় মাইনী নদী থেকে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত অপর আসামি বাবুরাজ চাকমাকে গ্রেফতারের চেষ্ঠা চলছে বলেও জানান খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার। আঞ্চলিক কোন সংগঠনের সাথে নয়নের হত্যাকারীদের সম্পৃক্ততা আছে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানান পুলিশ সুপার।
শুক্রবার স্থানীয়দের দিয়ে মোটরসাইকেল উদ্ধারের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে কাপ্তাই অঞ্চলের নৌবাহিনী এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলের ফায়ার সার্ভিসের সহযোগিতা নিয়ে মাইনী নদী থেকে মোটরসাইকেল উদ্ধার সম্ভব হয়েছে বলে জানান খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মো: আলী আহাম্মদ খান।
ঘটনার দিন (১জুন) লংগদু থেকে জুনেল চাকমা ও বাবু রাজ চাকমা যাত্রীবেশে খাগড়াছড়ি যাওয়ার কথা বলে ভাড়ায় চালিত মোটর সাইকেল চালক নুরুল ইসলাম নয়নকে নিয়ে যাত্রা করেন। পথে দীঘিনালা থেকে তাদের সঙ্গে রনেল চাকমা নামে আরো একজন যুক্ত হয়। আর এ তিনজন মিলে পরিকল্পনা করে নয়নকে হত্যা করেছে বলে জানান খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মো: আলী আহাম্মদ খান।
খাগড়াছড়ি থেকে তিন হত্যাকারী একই মোটরসাইকেলে করে দীঘিনালায় ফেরার পথে জেলা সদরের কৃষি গবেষণা এলাকার কাছাকাছি চারমাইল এলাকায় পৌঁছে পেছন থেকে লোহার রড দিয়ে মাথায় আঘাত করে নয়নকে হত্যা করে ঘাতকরা। এবং হত্যার পর তার মোটরসাইকেলটি ছিনতাই করে ঘাতকরা। ঘটনার পরপর দ্রæত লাশ উদ্ধার এবং ঘটনা জানাজানি হয়ে যাওয়ার কারনেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় পরিকল্পনা অনুযায়ী মোটরসাইকেলটি বিক্রি করতে না পেরে ঝামেলা এড়াতে সেটি মাইনী নদীতে ফেলে আসামিরা পালিয়ে যায়।
এদিকে যুবলীগ নেতা নুরুল ইসলাম নয়ন হত্যার ঘটনায় তার ছোট ভাই বাদী হয়ে খাগড়াছড়ি সদর থানায় মামলা দাযের করেছে। পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: মাইন উদ্দীনের নেতৃত্বে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এ মামলায় হত্যা রহস্য উদঘাটনে পুলিশকে সার্বিক সহযোগিতা করেছে বলেও জানান খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মো: আলী আহাম্মদ খান।
এ তিন ঘাতকের লাখ টাকার লোভের কাছে পরাজিত হয়েছে পাহাড়ের দীর্ঘদিনের লালিত সাম্প্রদায়িক-সম্প্রীতি। অসময়ে প্রিয়জনকে হারিয়েছে নয়নের স্ত্রী-সন্তান ও স্বজনরা। লংগদুর ২‘শ ১৩ টি পরিবার হারিয়েছে তাদের সারাজীবনের সঞ্চয়।