মোহাম্মদ কেফায়েত উল্লাহ
অধ্যক্ষ,মাটিরাঙ্গা মহিলা মাদ্রাসা,
প্রতি বছরের মতো এবারো আমাদের দুয়ারে কড়া নাড়ছে ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর ঈদুল আযহা । আগামীকাল দেশব্যাপী উদযাপিত হবে বাঙ্গালি মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই ধর্মীয় উৎসব ; বাঙালি সমাজে কোরবানির ঈদ নামেও পরিচিত এটি। এ উৎসব আমাদের মাঝে এসেছে কোভিড-১৯ নামক এক মহাক্রান্তিকালে। ফলে উৎসবের আমেজ যতটা থাকবে তার চেয়ে ঢের বেশি থাকবে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। এ উপলক্ষে সারাদেশে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে প্রশাসনের তরফ থেকে প্রচার করা হলেও মাঠ পর্যায়ের অবস্থা একেবারেই ঠুনকো। দেখা যাচ্ছে অনেক করোনা রোগী হাট-বাজারে ও রাস্তা-ঘাটে ঘুরে বেড়াচ্ছে অবাধে। তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্যে প্রশাসনিক ও সামাজিক কোন উদ্যোগও চোখে পড়ছেনা। আক্রান্ত পরিবারের মৌলিক প্রয়োজনগুলো মেটানোর জন্য প্রশাসনিক ও সামাজিক কিংবা রাজনৈতিক কোন তৎপরতাও চোখে পড়ছেনা। সাম্প্রতিক কঠোর লকডাউনে যে তৎপরতা আমরা দেখতে পেলাম সেটা ছিল অনেকটা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে নিরীহগোছের পথচারী ও অটোরিকশা চালকদের জরিমানা আদায়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ। এভাবে চৌদ্দ দিনের কঠোর লকডাউনের পর এক সপ্তাহের ছুটি পেয়ে পরিবারের সঙ্গে ঈদুল আযহার ছুটি ভোগ করতে ফিরছেন মাতৃছায়ায়। বেশিরভাগ মানুষের মধ্যে নেই মাস্ক ব্যবহার কিংবা স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার ন্যূনতম বালাই।
সে যাই হোক ঈদের নামাজ শেষে মহান আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে পশু কোরবানি করবেন সামর্থ্যবান মুসলমানরা। ঈদুল আযহার সঙ্গে পবিত্র হজ্জ্বের রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক। গতকাল ১৯ জুলাই সোমবার মক্কার অদূরে আরাফাতের ময়দানে সমবেত হওয়ার মধ্য দিয়ে বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসলিম সম্প্রদায় হজ্জ্ব পালন করেছেন।
স্থানীয় হিজরি মাস গণনা অনুযায়ী আজ সৌদি আরবে ঈদুল আযহা উদযাপিত হচ্ছে। সকালে মুযদালিফা থেকে ফিরে হাজীরা মিনায় অবস্থান করে পশু কোরবানিসহ হজের অন্য কার্যাদি সম্পাদন করবেন।
ঈদুল আযহা হযরত ইব্রাহিম (আ.) ও তাঁর পুত্র হযরত ইসমাইলের (আ.) সঙ্গে সম্পর্কিত। হযরত ইব্রাহিম (আ.) স্বপ্নে আর্দিষ্ট হয়ে পুত্র ইসমাইলকে আল্লাহর উদ্দেশে কোরবানি করতে গিয়েছিলেন। আল্লাহর পক্ষ থেকে এই আদেশ ছিল হযরত ইব্রাহিমের জন্য পরীক্ষা।
তিনি পুত্রকে আল্লাহর নির্দেশে জবাই করার সব প্রস্তুতি নিয়ে সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ইসলামের ইতিহাসে পাওয়া যায় , নিজের চোখ বেঁধে পুত্র ইসমাইলকে কোরবানি করতে গিয়েছিলেন মুসলিম জাতির পিতা নবী হযরত ইব্রাহিম (আ.)। কিন্তু তৎক্ষণাৎ আল্লাহর হুকুমে একটি দুম্বা কোরবানি হয়ে যায়। এটি স্বয়ং এসেছিল আল্লাহর পক্ষ থেকে।
এরপর থেকেই সামর্থ্যবান মুসলিমদের জন্য কোরবানির বিধান এসেছে ইসলামী শরিয়তে। সেই মোতাবেক প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলমানের জন্য পশু কোরবানি করা ওয়াজিব। ইসলামে কোরবানি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।
পবিত্র কোরআনে সুরা কাউসারে এ ব্যাপারে বলা হয়েছে, ‘অতএব আপনার পালনকর্তার উদ্দেশে নামাজ পড়ুন এবং কোরবানি করুন।’
রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘ঈদুল আযহার দিন কোরবানির চেয়ে আর কোনো কাজ আল্লাহর কাছে অধিক পছন্দনীয় নয়।’ গরু, মহিষ, উট, ভেড়া, ছাগল, দুম্বাসহ যে কোনো হালাল পশু দিয়ে কোরবানি দেয়া যায়।
আগামীকাল সকালে মুসল্লিরা নিকটস্থ ঈদগাহ বা মসজিদে ঈদুল আযহার দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায় করবেন। খতিব নামাজের খুতবায় তুলে ধরবেন কোরবানির তাৎপর্য। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ধনী-গরীব নির্বিশেষে সবাই একত্রে নামাজ আদায় ও শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন।
দেশবাসীকে ঈদুল আযহার শুভেচ্ছা জানিয়ে বাণী দেবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ। ইতোমধ্যে ঈদুল আযহা উপলক্ষে রাষ্ট্রীয়ভাবে সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের ভবনগুলোতে আলোকসজ্জা করা হয়েছে। জাতীয় সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে।
বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারসহ বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলো ঈদ উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করবে। ঈদের দিন সরকারিভাবে হাসপাতাল, কারাগার, এতিমখানা ও শিশু সদনে উন্নত বিশেষ খাবার পরিবেশন করা হবে।
এদিকে রাজধানী ঢাকা ও দেশের বড় বড় শহরগুলোতে বেশ কয়েকটি ঈদের জামায়াত অনুষ্ঠিত হবে। ঈদের জামাতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে র্যাব ও পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সার্বক্ষণিক নজরদারিতে থাকবে।