জ্বলজ্বলে জীবন্ত সাহিত্য প্রেমিক লেখক ও কবি স.ম.শামসুল আলমের কথা।

0
59

রায়হান আলী 

আশুলিয়া প্রতিনিধি:

সাহিত্যের বুকে অবাধ বিচরণ, হাতছানি দেয় দূরের এক নীল আকাশে। সাহিত্য যাঁকে একবার পেয়ে বসে তাঁর আর নিস্তার নেই। তিনি যত বড় শিল্পপতিই হন না কেন, সাহিত্য শিল্পের মায়াবী হাতছানি উপেক্ষা করতে পারবেন না। শীর্ষ ধনকুবের বর্ণাঢ্য জীবন-যাপন তাঁকে পূর্ণ পরিতৃপ্তি কিংবা স্বস্তি দিতে সক্ষম হবে না। তিনি ফিরে যেতে চাইবেন কিংবা একসময় ফিরে যাবেন সাহিত্যের সবুজ – শ্যামল ভূখন্ডে। হোক সে শিল্পপতি, রাষ্ট্রপতি কিংবা টাকার কোনো অমায়িক শক্তি ; যিনিই হোন না কেন তিনি আবার ফিরে যাবেন সাহিত্যের পলিমাটিতে। আর ভণিতা নয়, আমি বলছি জ্বলজ্বলে জীবন্ত সাহিত্য প্রেমিক লেখক ও কবি স.ম.শামসুল আলমের কথা।

এই নক্ষত্রের জন্ম ১৯৬২ সালের ২৫শে আগষ্ট রাজবাড়ী জেলার কালুখালী উপজেলাধীন শিকজান গ্রামে। পিতা প্রয়াত এস এম শাহজাহান আলী এবং মাতা সালেহা শাহজাহান। তিনি ১৯৭৯ সাল থেকে লেখালেখি শুরু করেন এবং সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় তার অগাধ বিচরণ। প্রকাশিত গ্রন্থ প্রায় অর্ধশতাধিকরও বেশি। এক্ষেত্রে শিশু-কিশোরদের জন্য লেখা গ্রন্থের সংখ্যা খুবই অধিকতর। তাঁর প্রথম লেখা ছাপা হয় ১৯৭৯ সালে ফরিদপুর জেলা পরিষদের মুখমাত্র মাসিক ‘ গণমন ‘ এ। ছেলেবেলা থেকেই সাহিত্যর ভূখন্ডে অবাধ বিচরণ করেন স.ম.শামসুল আলম। তিনি ১৯৮৪ সালে সিভিল ইন্জিনিয়ারিং এ ডিপ্লোমা করেন। সাহিত্য চর্চা করতে করতে কিছুদিন কচি কাঁচার মেলায় রোকনুজ্জামান খান এর ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবেও কাজ করেছিলেন। ১৯৯৭ সালে প্রকাশিত হয়েছিল তাঁর প্রথম ছড়ার বই ‘ হেসে ফেটে দম ‘। ভূমিকায় দাদাভাই গ্রন্থটির পরিচয় তুলে ধরেছিলেন।
দেশের জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল দৈনিক ‘বাংলার রুপ’ পত্রিকার সাক্ষাৎকারে কবি স.ম.শামসুল আলম তার মননশীল বিকাশ, আত্নপলব্ধি,সৃজনশীল চেতনা বিকাশের কথা উল্লেখ করেন। কবি বলেন, শামসুল আলম ( আমি) গ্রামের সাধারণ মানুষ। প্রকৃতি ও বিচিত্র মানসিকতার খেয়ালে মানুষকে তুলে এনেছেন তাঁর লেখায়। ৩৮ টি ছড়া – কবিতার সমষ্টি নিয়ে বইটি প্রকাশিত। শিশুরা হাসতে চায়। হাসি – আনন্দকে তারা ভালোবাসে। আর তাদের হাতে তিনি তুলে দিয়েছেন এই হাসির খোরাক।
সৃষ্টিশীল লেখালেখি কীভাবে করতে হয়, কীভাবে একটি গল্প অথবা উপন্যাসের কলকব্জা জোগাড় করে অথবা তৈরী করে জোড়া দিতে হয়, বাজিয়ে দেখতে হয়, তার কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম অথবা তত্ব নেই। ফলে এসব শেখানো যায় না। হাতে – কলমে করে দেখানো যায় না। যা করা যায়, তা হচ্ছে অভিজ্ঞতার আদান – প্রদান। একজন কবি অথবা কথাসাহিত্যিক কীভাবে লেখেন, কোন পথে উঠে আসে তার নির্মাণ চিন্তা, আর কীভাবে কবিতা গল্পের বিষয় আসায় আর শৈলীর বিষয়গুলো তিনি নিষ্পত্তি করেন, সেসব নিয়ে কবি স.ম. শামসুল আলমের সাহিত্যের পথে অবাধ বিচরণ। তিনি একাধারে কবি, লেখক, ছড়াকার, নাট্যকার, শিশুসাহিত্যিক, কথাসাহিত্যিক প্রভৃতি।
তিনি আরও জানান, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে লিখেছি ‘বঙ্গবন্ধু সমগ্র’ বইটি। ১৯৮৬ সাল থেকে শুরু করে ২০১৯ সাল পর্যন্ত রচিত বঙ্গবন্ধু সম্পর্কিত মৌলিক লেখাগুলো এই গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ৩৩৪ পৃষ্ঠায় এই গ্রন্থে স্থান পেয়েছে ৭ টি প্রবন্ধ, ৫ টি গল্প, ১ টি নাটক, ১৫ টি কবিতা, ২২ টি গান, ৮ টি কিশোর গল্প, ৫০ টি ছড়া-কবিতা এবং ১ টি কিশোর উপন্যাস। স.ম.শামসুল আলমের এই মৌলিক লেখাগুলো বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও অন্যান্য পত্র-পত্রিকায় বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত হয়েছে এবং তার বিভিন্ন গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। খুব সাহসের সঙ্গে স.ম.শামসুল আলম সবসময় উচ্চারণ করেছেন বঙ্গবন্ধুর নাম।
‘বঙ্গবন্ধু সমগ্র’ গ্রন্থটি বৈচিত্র্যপূর্ণ মনে হলেও এর সাবলীল কথ্য, সৃজনশীল ধারণা ও বঙ্গবন্ধুর বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। কবি বলেন :-
যতদিন ঐ সূর্য আকাশে উঠবে
যতদিন ফুল নিজ আনন্দে ফুটবে
ততদিন জানি বঙ্গবন্ধু থাকবে তোমার নাম
বাংলাদেশের ধূলিতে ধূলিতে সেই কথালিখলাম
এদিকে শিশুসাহিত্যিক সুকুমার বড়ুয়া তার ছড়ায় কবি শামসুল আলমকে নিয়ে লিখেছেন :
রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই
কে বলে জীবিত নাই,
লেখক সম্পাদক সংগঠক
সোনালি রুপালি লাল টকটক
উজ্জ্বল মুখ
আলম স.ম.শামসুল
ছড়া কবিতায় ফুটিয়েছে ফুল।
রাশেদ রউফের সংকলনে প্রকাশ পায় :-
লিখেন তিনি গান কবিতা
       ফোটান ছড়ার ফুল
তিনি সবার প্রিয় মানুষ
       স.ম. শামসুল।
এছাড়া স্মৃতিচারণে শিশুসাহিত্যিক আখতার হুসেন, লেখক ইমদাদুল হক মিলন, ছড়াকার লুৎফর রহমান রিটন স.ম.শামসুল আলমকে লাজুক, ভদ্র এবং বিনয়ী যুবক, অসাধারণ মনের মানুষ এবং জীবনে চুয়ান্নটি বসন্ত পেরুনো আমাদের সম পান্নে পদার্পন করছে বলে বিশেষভাবে অ্যাখ্যায়িত করেছেন।
স.ম.শামসুল আলম কর্তৃক প্রকাশিত গ্রন্থে শিশু-কিশোরদের জন্য লেখা গ্রন্থের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। তাঁর উল্লেখযোগ্য জনপ্রিয় গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে আমার মনের আকাশ জুড়ে, মায়ের অলংকার, হেসে ফাটে দম, আব্বুর ফিরে আসা, আমার দেশের মনের সাথে, বাবার কবর, মিরধা ভাইয়ের মজার কীর্তি, শব্দরম্য, নতুন রঙে আঁকা, গল্প নাচে ছড়ার গাছে, ছড়া সমগ্র, কিশোর কবিতা সমাহার, কিশোর গল্প সমাহার, দুঃখের কাছে আশ্রিত আমি, চমক দেব ধমক দেব, লিজার বাগানবাড়ি, বলতে পারি কথা, বাংলাদেশের রুপ কথা, সমকথা প্রভৃতি। ২০১৬ সালে প্রকাশিত ‘আমার বঙ্গবন্ধু’ বইটি পাঠক সমাজে সমাদৃত হয়েছে।
স.ম.শামসুল আলম বেশকিছু সংগঠন থেকে সংবর্ধনা-সম্মাননা পেয়েছেন। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে শিশুসাহিত্য বিশেষ অবদানের জন্য অতীশ দীপঙ্করের গবেষণা পরিষদ কর্তৃক ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা সম্মাননা’ (২০১৪), কবিতায় বিশেষ অবদানের জন্য ‘কবি ওমর আলী সাহিত্য পদক’ (১৪২২), ছড়া সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য ‘শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম স্মৃতি পদক’ (২০১৬), বাংলাদেশ শিশুসাহিত্য একাডেমি কর্তৃক মায়ের অলংকার গ্রন্থের জন্য ‘কিশোর কবিতা সম্মাননা’ (২০১৬), কিশোর কবিতা ও গদ্যে বিশেষ অবদানের জন্য ‘মোহাম্মদ নাসির আলী শিশুসাহিত্য পুরষ্কার’ (২০১৭) প্রভৃতি। বর্তমানে তিনি নির্মাণ ও আবাসন ব্যবসার সাথে জড়িত। শিশু-কিশোর সংগঠন আনন ফাউন্ডেশনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here