এলাহী শাহরিয়ার নাজিম
রৌমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি
অধ্যক্ষকে অবৈধ ভাবে বরখাস্ত। একাডেমিক ভবনে তালা। অনুমোদনকৃত শিক্ষক প্রতিনিধি বাদ রেখে নিজের মনগড়া প্রতিনিধি তৈরী করে সভা। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে দায়িত্ব অর্পণ করায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাছে অধ্যক্ষের লিখিত অভিযোগ। অতঃপর দুই সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন। ১০ অক্টোবর দুপুরে কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার যাদুরচর ডিগ্রী কলেজে এ ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে কলেজের শিক্ষক কমিটির মধ্যে দ্বন্দ থাকায় এলাকার সুধিমহলের মাঝে উঠেছে সমালোচনার ঝড়। শিক্ষার্থীদের লেখা পড়া নিয়ে সংশয়।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, যাদুরচর ডিগ্রী কলেজে গভর্নিং বডির জন্য গত ৩০ ডিসেম্বর ২০ সালে ৬ মাস মেয়াদে একটি এডহোক কমিটি অনুমোদন দেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় । নির্দিষ্ট মেয়াদের মধ্যে পূর্নাঙ্গ গভর্নিং বডি গঠনের লক্ষে ৩ জন অভিভাবক, ৩ জন শিক্ষক প্রতিনিধি, ১ জন প্রতিনিষ্ঠাতা, ১ জন দাতা, ১ জন হিতৈষী সদস্য নির্বাচনের লক্ষে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্ধারিত ফরমে আবেদন করেন অধ্যক্ষ । আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ৯ সপ্টেম্বর ২ বছর মেয়াদে পূর্নাঙ্গ গভর্নিং বডির অনুমোদন দেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। নতুন সভাপতির আব্দুস সালাম মন্ডলের আহŸানে প্রথম সভা বসে ২৮ সেপ্টেম্বর। পরিচিতি পর্বে সভাপতি মনমতো সদস্য নির্বাচিত হয়নি মর্মে সভার কার্যক্রম সমাপ্ত ঘোষনা করেন। পরবর্তিতে অনুমোদনকৃত তার অপছন্দের সদস্যদের বাদ দিয়ে মনগড়া ভাবে তার পছন্দের লোককে কমিটিতে অন্তর্ভূক্ত করেন।
পরিচালনা পরিষদের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম জানান, আইনবহির্ভুত ভাবে মনগড়া ভাবে পরিচালনা পর্শদের সদস্য ছাটাই ও অন্তর্ভুক্ত করে আমাকে গত ১০ অক্টোবর পুনরায় সভা আহŸানের নির্দেশ দেন। সভাপতি নির্দেশনা পত্রে গভর্নিং বডির সদ্যসদের তালিকায় অনিয়ম থাকায় আমি সভাপতির ডাকা সভা আইনগত ভাবে সিদ্ধি হবে না মর্মে আমিসহ ৯জন সদস্যের স্বাক্ষরিত পত্রের মাধ্যমে সভাপতিকে জানিয়ে দেই। ফলে তিনি আমার প্রতি আরও ক্ষিপ্ত হন । এরই জেরধরে সভাপতি আব্দুস সালাম আমাকে না জানিয়ে দাতা সদস্য মজিবর রহমান বঙ্গবাসীসহ তাদের মনগড়া ভাবে অর্ন্তভুক্ত সদস্যদের নিয়ে সভা করেন। সভায় নিয়ম বহির্ভুত ভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে আমাকে বরখাস্ত করেন এবং ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসাবে দায়িত্ব অর্পন করেন অধ্যাপক শফিকুল ইসলামকে। পরে তারা একাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন। এ বিষয়ে আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি।
এবিষয়ে কলেজের সভপতি আব্দুস সালাম মন্ডলের সাথে কথা হলে তিনি জানান, আমরা যাদের নাম পাঠানো জন্য বলেছি অধ্যক্ষ তাদের নাম বাদ দিয়ে তার পছন্দের লোকের নাম পাঠিয়ে অনুমোদন নিয়েছে। তাই আমি অনুমোদিত সদস্যদের বাদ দিয়ে আগের সদস্যদের অর্ন্তভুক্ত করেছি। অধ্যক্ষ কে সভা আহবান করার জন্য বলেছিলাম কিন্তু তিনি সভা আহবান না করলে। আমি নিজেই সভা আহবান করে তার বিগত দিনে অনিয়ম দূর্নীতির কারণে সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক তাকে বরখাস্ত করা হয়। প্রভাষক শফিকুল ইসলামকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে দায়িত্ব দিয়েছি। রফিকুলের কাছে কলেজের চাবি থাকায় আগের তালা খুলে ফেলে নতুন তালা লাগানো হয়েছে।
দাতা সদস্য মজিবর রহামন জানান, আমি এক সময় এই কলেজের সভাপতি ছিলাম। ঐ সময় অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম আমার স্বাক্ষর ও সিল জালিয়াতি করে কলেজে বিভিন্ন পদে নিয়োগ দিয়ে প্রায় ৩৫ লক্ষ ৬৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
এব্যাপারে রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল ইমরান জানান, এ ঘটনায় অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে কলেজ পরিচালনা পর্শদের সভাপতি আব্দুস সালাম মন্ডল, দাতা সদস্য মজিবর রহমান বঙ্গবাসী, সহকারি অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম, প্রভাষক রফিকুল ইসলামকে অভিযুক্ত করে একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। সহকারি কমিশনার (ভুমি) তানভীর আহমেদ ও একাডেমিক সুপারভাইজার মুক্তার হোসেনসহ দুই সদস্যের একটি তদন্তটিম গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।