এলাকার জনপ্রতিনিধিদের ছত্রচ্ছায়ায় বিলীন করে নিয়ে যাচ্ছে ভেকু নামের (খনন যন্ত্র) ফসলি জমি সহ সরকারি খাল ও বিলের জমি । মাটিগুলো কেটে নিয়ে এলাকার বিভিন্ন ইটভাটায় অবৈধভাবে বিক্রি করা হচ্ছে ।আর এর ফলে উজার হচ্ছে ‘টপ সয়েল’; অথচ এব্যাপারে প্রশাসনের নজরদারীর অভাবে উজাড় হচ্ছে মাটি। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন স্থানীয় কৃষকেরা, পাশাপাশি ভারসাম্য হারাচ্ছে পরিবেশ ,জলাশয়ের পাড় ভেঙ্গে যাচ্ছে এবং বর্ষা মওসুমে বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে স্রোতধারা।
সাধারণ কৃষকদের অভিযোগের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) সাভারের আশুলিয়া থানাধীন শিমুলিয়া ইউনিয়নের রাঙ্গামাটি এলাকায় গেলে গণমাধ্যমকর্মীদের মাধ্যমে বিষয়টি সামনে আসে।
স্থানীয়দের মাধ্যমে জানা যায় শিমুলিয়া ইউনিয়নের রাঙ্গামাটি খালের মাটি কেটে নিচ্ছেন স্থানীয় আবুল হোসেন নামের এক ব্যক্তি। ব্রিজের নিচ দিয়ে প্রবাহিত জলধারা শুকনো মৌসুমের কারণে শুকিয়ে যাওয়ায় তিনি ভেকু ব্যবহার করে গভীরভাবে মাটি কেটে ট্রাকে করে স্থানীয় ইটভাটাগুলিতে বিক্রী করছেন।
এবিষয়ে মুঠোফোনে আবুল হোসেনের নিকট এই ভেকু ব্যবহার করে ‘টপ সয়েল’ ইট ভাটায় বিক্রী করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার জায়গার মাটি আমি বিক্রী করছি, তাতে আপনাদের কি?’ এভাবে নির্বিচারে মাটি কাটতে পারেন কিনা জিজ্ঞেস করলে পরে তিনি জানান, আপনারা বলছেন যখন এখন আর কাটবো না।
এদিকে আশুলিয়ার শিমুলিয়া ইউনিয়নের ইউপি সদস্য (মেম্বার) খলিল এবং সামছু নামের দুই ব্যক্তি রাঙ্গামাটি খালের সংলগ্ন কৃষিজমি থেকে দুইটি ভেকু ব্যবহার করে মাটি কেটে ভাটায় বিক্রী করছেন।” বাংলার রূপ নিউজ 24″ এর প্রতিনিধি ঘটনাস্থলে গেলে ভেকু দুইটির চালক সহ অন্যরা কথা না বলেই ঘটনাস্থলে বেকুব ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। পরে শিমুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে ইউপি সদস্য খলিলের নিকট বিষয়টি জানতে চাইলে তিনিও জানান তার নিজের জমি থেকে তিনি মাটি কাটছেন। তবে ইট ভাটায় বিক্রীর জন্য কৃষি জমির উপরিভাগ থেকে মাটি কাটতে পারেন কিনা জানতে চাইলে তিনি কোনো উত্তর দিতে রাজি হয়নি।
শিমুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান উপস্থিত সাংবাদিকদের সামনে এই প্রতিবেদককে জানান, ‘যারা মাটি কাটছে তারা একাত্তুরের রাজাকার বলে আখ্যায়িত করেছেন ,তিনি আরো বলেন তারা এখনও দেশের ক্ষতি করে চলছে। আপনারা সাংবাদিকেরা তাদের বিরুদ্ধে লেখেন।’ অথচ তার পরিষদের ইউপি সদস্য অভিযুক্ত খলিল সাহেব যার বিরুদ্ধেও মাটি কাটার অভিযোগ তিনি তখন চেয়ারম্যানের সাথেই উপস্থিত ছিলেন।
এব্যাপারে সাভার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার মুঠোফোনে এবিষয়ে জানতে চেয়ে কল করা হলেও যে কোন কারণে তিনি ফোন রিসিভ করেন নাই।
তবে এই ঘটনায় আশুলিয়া রাজস্ব সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাজওয়ার আকরাম সাকাপি ইবনে সাজ্জাদ এর মুঠোফোনে কল করা হলে ব্যস্ততার কারণে ঐ মূহুর্তে তিনি ফোন রিসিভ না করায় এব্যাপারে তার বক্তব্য পাওয়া যায় নাই।
এভাবে ব্যক্তিগত স্বার্থের কারণে নদী-খাল-বিল ও কৃষি জমির মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রীর কারণে জমির উপরিভাগের উর্বর মাটি বিলীন হয়ে যাচ্ছে। তাই স্থানীয় কৃষকেরা এবিষয়ে প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এদিকে, অবৈধভাবে মাটি গুলো কেটে বিক্রি হচ্ছে স্থানীয় অবৈধ ইটভাটা গুলোতে ।যেসব ভাটায় এই মাটি বিক্রী হচ্ছে সেগুলোর মধ্যে মোল্লা ব্রিকস, স্টার ব্রিকস ও পল্লী ব্রিকস উল্লেখিত। অথচ এসব ভাটার অবস্থান চলাচলের মূল সড়কের সাথে এবং এইসব ভাটার সাথেই বিস্তীর্ণ কৃষিজমি যেখানে সরিষা ও ভুট্টার আবাদ করছে সাধারণ কৃষকেরা । অথচ এই ভাটাগুলোর জন্য ওই সব ফলন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
এছাড়াও ভাটাগুলোর লাইসেন্স এর মেয়াদ শেষ হয়ে যাবার পরেও নতুনভাবে অনুমোদন না নিয়েই তারা চালিয়ে যাচ্ছেন অবৈধ কর্মকাণ্ডের আনন্দধারা ,আর ধ্বংস করছেন প্রকৃতি ও পরিবেশের জীব বৈচিত্র ।