নিজস্ব প্রতিবেদক: সাভারের আশুলিয়ায় নিয়মবহির্ভূত ভাবে গড়া তুলা নির্মাণাধীন ৬তলা ভবনের ছাদ থেকে ইট ও নির্মাণ সামগ্রী পাশের বাড়ির টিনের চালের উপর পড়ে ভেঙে পড়ার অভিযোগ উঠেছে। এতে করে ওই বাড়িতে থাকা ভাড়াটিয়া রতন ওরফে চান্দাল ও তার পরিবার অল্পের জন্যে প্রাণে বেঁচে যায়।
বৃহস্পতিবার (৯নভেম্বর) বিকালে এবিষয়ে আশুলিয়া থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন ভুক্তভোগী বিমানবাহিনীর অবঃ সার্জেন্ট মোঃ নুরুন্নবী মোল্লা। এরআগে গতকাল বিকাল ৫টার দিকে আশুলিয়ার শেরআলী মার্কেট ধলপুর এলাকার নির্মাণধীন মক্কা টাওয়ারের নির্মাণাধীন ৬তলার উপর থেকে দেয়াল ধসে পড়ে।
জানা যায়, গত ৮ই নভেম্বর বুধবার সন্ধ্যায় এক প্রভাবশালী মহলের নির্মাণাধীন ৬তলা ভবনের ছাদ থেকে ইট ও নির্মাণ সামগ্রী ভেঙ্গে পড়ে পাশের বাড়ির টিনের চালের উপর পড়ে। এতে করে ওই বাড়িতে থাকা ভাড়াটিয়া রতন ওরফে চান্দাল ও তার পরিবার অল্পের জন্যে প্রাণে বেঁচে যায়। সেই সাথে টিনসেড বাসার দুটি কক্ষ ভেঙ্গে যায়। কক্ষে থাকা আসবাবপত্রসহ অন্যান্য জিনিসেরও ক্ষয়ক্ষতি হয়। পরে এঘটনার সংবাদ সংগ্রহে গেলে গণমাধ্যম কর্মীদের উপর চড়াও হন এবং খারাপ আচরণ করেন ভবনটির যৌথ মালিকানা র্যাবের পরিচয় দানকারী ইউনুস হাওলাদার নামে এক ব্যাক্তি। কোন উপায় না পেয়ে এবিষয়ে আশুলিয়া থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন ভুক্তভোগী বিমানবাহিনীর অবঃ সার্জেন্ট মোঃ নুরুন্নবী মোল্লা।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমার বাড়ীর পশ্চিম পাশে মোঃ জালাল উদ্দিন, সৈয়দ মতিউর রহমান সহ মোট ১৬ জনে মিলে ১০ শতাংশ জমির উপর সাভার ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড হতে একটি ১০ তলা ভবনের নকশা অনুমোদন করে। নকশা বহির্ভুতভাবে ভবন নির্মাণ করতে শুরু করে। এসময় আমি ও আশেপাশের বাড়ীর মালিকরা আপত্তি করলেও তারা কারো আপত্তি না শুনে সেখানে অবৈধভাবে ভবন নির্মাণ করতে থাকে। নকশায় বাড়ীর চারিদিকে যে পরিমাণ জায়গা খালী রাখার কথা ছিল, তা না রেখে ভবন নির্মাণ করে। এতে আশেপাশের বাড়ীতে আলো বাতাস ঢুকতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে।
এছাড়া ভবণ নির্মাণে যেসকল নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার ছিলো তা তারা করে নাই। এরফলে উপর হতে ইট, কাঠ ও রডের টুকরা প্রতিনিয়তই নিচে পড়ছে। যার কিছু অংশ রাস্তায় এবং কিছু আমার বাড়ীর চালের উপর পড়ে টিনের ক্ষতি হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৮ই নভেম্বর বিকাল ৫টায় ওই ভবনের ৬তলা হতে দেয়াল ভেঙ্গে আমার বাড়ীর টিনের চালের উপর পড়ে চাল ভেঙ্গে ঘরের ভিতর পড়ে। এতে ঘরে থাকা টিভি, ফ্রিজ, সোকেস, খাট ভেঙ্গে ৩লাখ টাকার ক্ষতি হয়। ঐসময় আমার বাড়ীর লোকজন ঘর থেকে দ্রুত বের হয়ে গেলে তারা প্রাণে বেঁচে যায়।
এলাকাবাসী জানান, সরকারি বিধি নিষেধের তোয়াক্কা না করেই গড়ে তুলেছে এই বহুতল ভবন। এই এলাকার সরকারি কর্মকর্তা হওয়ায় তাদের ক্ষমতার দাপটে ভবন তৈরিতে অধিকাংশ ভবন মালিকরা মানছে না ভবন তৈরির আইন। এতে এলাকা উন্নত হলেও তৈরি হচ্ছে অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও বাড়ছে জনদূর্ভোগ। অপরিকল্পিত নগরায়ণের কারণে দিনদিন বাড়ছে দূর্ঘটনার। এসকল বিষয়ে প্রতিকার পেতে আমরা বসবাসকারী সাধারণ মানুষের পোহাতে হচ্ছে সীমাহীন হয়রানির শিকার। প্রভাবশালীদের ক্ষমতা আর টাকার গরমে তাদের থাকতে হচ্ছে নীরব দর্শকের ভূমিকায়।
এ ঘটনার বিষয়ে আমি ও স্থানীয়দেরকে নিয়ে জানতে গেলে তারা উত্তেজিত হয়ে আমাকে প্রাণ নাশের হুমকি দেয় এবং তাদের সাথে থাকা অজ্ঞাতনামা ২-৩ জন লোক নিয়া আমাকে মারার জন্য আসলে আমি দ্রুত ওখান থেকে সরে যাই। এরপরে কোন উপায় না থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করি। আমি এর সুষ্ঠ বিচার ও সমাধানের জন্য প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
প্রাণে বেঁচে যাওয়া ভাড়াটিয়া চান্দাল বলেন, আমি রুমের ভিতরে ছিলাম। মাগরিবের সময়ে আমি অন্য রুমে গেলে ওই মূহুর্তে পাশের নির্মাণাধীন ভবন থেকে ওয়াল ভেঙ্গে রুমের উপর পড়ে। এতে চাল ভেংগে আমার রুমে থাকা আসবাবপত্রের অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়। আমি যদি ঘটনার সময়ে ওই রুমে থাকতাম তাহলে আমার যে কি অবস্থা হতো, তা একমাত্র আল্লাহ ভালোই জানেন। এর আগেও ওই ভবন থেকে কাঠ পড়ে এক পথচারী আহত হয়।
ঘটনাস্থলে পরিদর্শনে যান আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মাসুদ আল-মামুন। তিনি বলেন, ঘটনাস্থলে আমি পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। ভুক্তভোগীরা আজ থামায় অভিযোগ দায়ের করেছে ডিউটি অফিসার এসআই ফরহাদ বিন করিমকে তদন্ত করতে দায়িত্ব দিয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে সাভার ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড এক্সিকিউটিভ কার্যালয়ের প্রধান কর্মকর্তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ইতোমধ্যেই আমাদের ইঞ্জিনিয়ারের একটি টিম আজ ঘটনাস্থল পরিদর্শন গিয়ে দেখে এ ভবনটি যথার্থ নিয়ম অনুযায়ী তৈরি করা হচ্ছে না। তাদের ভবন নির্মাণে কিছু কাজের ব্যত্যয় রয়েছে। তাদের ৯তলা পর্যন্ত অনুমতি থাকলে নিয়মবহির্ভূত ভাবে ৯তলার উপরে কলাম তৈরি করেছে। তাদের নির্মাধীন ভবনের ৫তলা পর্যন্তও কোনো সেফটি প্রটেকশন ছিলোনা। নিয়মের ব্যত্যয় ঘটার কারণেই আমরা অবশ্যই মালিক পক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করাসহ এ ভবনের অননুমোদিত অংশ ভেঙ্গে ফেলাসহ কাজ বন্ধের নোটিশ করেছি।