মোঃ সোহান আহমেদ সানাউল।
আশুলিয়া, সাভার, ঢাকা ।।
সাভারের আশুলিয়ার মধ্য আউকপাড়া এলাকায় একটি আবাসিক বাড়ীর ভিতরে অবৈধভাবে অবাধে চালিয়ে যাচ্ছে বিষাক্ত কয়েল এর ব্যবসা। যাহা মানবদেহের জন্য মারাত্বক ক্ষতিকারক উপাদান সমৃদ্ধ ও নিম্নমানের । বিএসটিআই এর কোনরকম অনুমোদন ছাড়াই বহুদিন ধরে চালিয়ে যাচ্ছে তাদের এই অবৈধ ব্যবসা ।এই কারখানায় তৈরী করা কয়েলের নাম নেই, নেই কোনো ধরণের সাইনবোর্ডও।
সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) আশুলিয়ার মধ্য আউকপাড়া এলাকার ওই কারখানাটিতে গিয়ে দেখা যায়, স্থানীয় বাসিন্দা বশির আহম্মেদ ঐ বাড়ির মালিক ।তার বাড়ির নিচতলায় অবৈধ এই কারখানাটির জন্য একজনকে ভাড়া দিয়েছেন বলে জানা যায়। তবে বাড়ির মালিককে পাওয়া গেলেও কয়েল কারখানাটির মালিক কে সেটা রয়ে গেছে রহস্য ঘেরা ।
এ সময় কয়েল কারখানায় অনুসন্ধানকারী টিম গেলে হাবিব নামের এক ব্যক্তি কে কারখানার ভিতরে পাওয়া যায়, এ সময় তার কাছে ফ্যাক্টরির মালিকের নাম জানতে চাইলে তিনি মালিকের নাম জানেন না বলে আমাদের জানান। তবে এই বাড়ীর মালিক বশির আহম্মেদই মূলত কারখানাটির সার্বিক দায়িত্বে রয়েছেন জানা গেছে ।
সরেজমিনে কারখানাটির ভিতরে ঘুরে দেখা যায় মানবদেহের জন্য মারাত্বক ক্ষতিকারক কেমিক্যাল ব্যবহার করে কয়েল বানানো হচ্ছে।এছাড়াও এখানে কর্মরত শ্রমিকদের নেই কোন প্রকার সেফটি ব্যবস্থা।
অবৈধ সকল কার্যক্রম হাতের নাগালে থাকার কারণে অসাধু এই ব্যবসায়ীরা সব জায়গায় যেন অবৈধের মেলা বসাতে চান । দেখা যায় অবৈধ এই কয়েল কারখানাটির গ্যাস সংযোগ টিও ব্যবহার হচ্ছে অবৈধভাবে ।বশির আহম্মেদ নামের এই বাড়িওয়ালা তিতাস গ্যাসের আবাসিক সংযোগ এর অনুমোদন নিয়ে সেখান থেকে আলাদা অতিরিক্ত পাইপলাইন ব্যবহার করে কয়েল কারখানার ‘ড্রায়ার রুম ‘এ সংযোগ দিয়েছেন।
ড্রায়ার রুমের পরিস্থিতি দেখতে গেলে দেখা যায় ভয়াবহ আগুণের তান্ডব। দাউ দাউ করে জ্বলছে গ্যাসের এই আগুণ । ভয়ানক উত্তাপে ওই রুমের দরজার সামনে কয়েক সেকেন্ডও দাঁড়াতেও কষ্ট হয় এই অনুসন্ধানকারী টিমের । অথচ, এই ‘ড্রায়ার রুম’ টি একেবারে আবাসিক এলাকার মানুষের চলাচলের রাস্তার সাথে। ওই রুম এর দেয়াল ভয়াবহভাবে উত্তপ্ত থাকে। এছাড়া দেখা যায় বিদ্যুৎ এর লাইনও নেয়া হয়েছে ওই রুমের ভিতর দিয়েই। তাই গ্যাস লিকেজ সহ এভাবে দিনরাত কয়েল শুকানোর কাজে মাত্রাতিরিক্ত চাপের গ্যাস ব্যবহারের ফলে ঘটতে পারে যেকোনো ধরনের ভয়াবহ দুর্ঘটনা । ভিতরে বিস্ফোরণ জাতীয় কিছু ঘটলে রাস্তার পাশের ওই দেয়াল ধ্বসে পড়ে প্রানহানির ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।
এছাড়াও এই কারখানার পাশে রয়েছে অসংখ্য আবাসিক বাসস্থান যেখানে রয়েছেন নারী ও শিশুসহ হাজার হাজার মানুষের বসবাস ।
এব্যাপারে ওই বাড়ির মালিক বশির আহম্মেদকে আবাসিক এলাকার ভিতরে মশার কয়েল তৈরীর কারখানা কতটুকু যৌক্তিক জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি একাই তো করছি না, আরো অনেকে এভাবে বাসাবাড়িতে কয়েল তৈরী করছে।
এসময় কয়েল কারখানায় শিল্প সংযোগ না নিয়ে কিভাবে আবাসিক গ্যাস সংযোগ দিয়ে কাজ চলছে এবং বিষয়টি বৈধ কিনা জানতে চাইলে তিনি কাজটি অবৈধ বলে স্বীকার করেন। তবে এক পর্যায়ে তিনি অনুসন্ধানী টিমকে দুই ঘন্টা পরে এসে কারখানার মালিকের সাথে এবিষয়ে কথা বলে যেতে বলেন এবং বিষয়টি নিয়ে কোন প্রকার প্রতিবেদন না করার জন্য অনুসন্ধানকারী টিমকে অর্থের প্রলোভন দেখান ।
এ ব্যাপারে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড এর সাভার জোনাল অফিসের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী আবু সাদাত মোঃ সায়েম এর নিকট মুঠোফোনে আবাসিক গ্যাস দিয়ে শিল্প সংযোগ এর কাজ করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এব্যাপারে তদন্ত করে আগামীকাল তাদের বিরুদ্ধে আইন গত ব্যবস্থা নেয়া হবে।