আদালতের আদেশে মৃত্যুর ২৩ দিন পর কবর থেকে লাশ উত্তোলন।

0
18

মোঃসোহান আহমেদ সানাউল,
নিজস্ব প্রতিবেদক :

সাভারে আদালতের নির্দেশে মৃত্যুর ২৩ দিন পর কবর থেকে জামাল হোসেন গোলদার (৫৫) নামের এক ব্যাক্তির লাশ উত্তোলন করেছে পুলিশ।

পৌরসভা ৮ নং ওয়ার্ডের দক্ষিণ রাজাসনের ঘাস মহল কাইজ্জারটেক এলাকার আলবেদা বাইতুন নূর জামে মসজিদের সামাজিক কবরস্থান থেকে রবিবার (৮ অক্টোবর) সকালে লাশটি উত্তোলন করা হয় ।

এ সময় এখানে সাভার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এস এম রাসেল ইসলাম নূর এর উপস্থিতিতে জামাল গোলদারের লাশ তুলে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে।নিহত জামাল হোসেন দক্ষিণ রাজাসন ঘাসমহল এলাকার মৃত ফরিদ আহমেদ গোলদারের ছেলে।
রাজধানীর গাবতলী এলাকায় ইঞ্জিন ওয়েলের ব্যাবসা করতেন মৃত জামাল গোলদার,এছারাও রাজাসন এলাকার রিয়াদ ডেইরি ফার্মের স্বত্বাধিকারী ছিলেন।

এই ঘটনায় নিহতের ভাই মোঃ ইমরান হোসেন গোলদার বাদী হয়ে আদালতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন যাহার নাম্বার (নং -১০৬৬)।এই মামলায় ৪ জনের নাম উল্লেখ করে আসামি করেন , আসামীরা হলো একই এলাকার আব্দুল হামিদ মাওলানার ছেলে লোকমান হাকিম (৫১),ফোরকান হাকিম (৪৮), গোফরান হাকিম (৪৫) ও ভোলা জেলার রুইতা গ্রামের আজিজ সিয়ালীর ছেলে কাঞ্চন সিয়ালী ওরফে দ্বীন মোহাম্মদ (৫৫)।

পুলিশ সূত্রে জানা যায় ,গত ১৬ সেপ্টেম্বর রাতে
বাসা থেকে বের হন নিহত জামাল গোলদার।পরে দক্ষিণ রাজাসন সাইনবোর্ড এলাকার ফোরকান হাকিমের বাড়িতে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক ১৬ সেপ্টেম্বর রাত ১২ টা ২৫ মিনিটে তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ সময় স্ট্রোকজনিত কারণে হাসপাতালে নেওয়ার পূর্বেই জামাল হোসেনের মৃত্যু হয় বলে জানানো হয়।

এ ব‍্যাপারে মামলার বাদী ও নিহতের ভাই ইমরান হোসেন গোলদার জানান, গত ১৬ সেপ্টেম্বর রাত ১০ টা ৪০ মিনিটে ফোরকানের মাধ্যমে মুঠোফোনে সংবাদ পাই, আমার ভাই ফোরকানের বাড়িতে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। খবর পেয়ে দ্রুত সেখানে আমি সহ আমাদের পরিবারের সদস্যরা হাজির হই। সেখানে গিয়ে দেখতে পাই আমার ভাই জামাল হোসেন ফোরকানের বাড়ির উঠানে ফোরকানের কোলে উলঙ্গ, অজ্ঞান অবস্থায় রয়েছে।

আমাদের উপস্থিতি টের পেয়ে দ্রুত কোল থেকে মাটিতে শুইয়ে দিয়ে ফোরকান বলে জামাল হোসেন তার বাড়িতে এসে হটাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তাকে হাসপাতালে নেওয়া প্রয়োজন। এ সময় জামাল হোসেনের মাথায় ও দুই হাঁটুতে আঘাতের চিহ্নসহ উলঙ্গ ও অজ্ঞানের ব্যাপারে ফোরকানসহ উপস্থিত সবাইকে এর কারণ জানতে চাইলে তিনি পড়ে গিয়ে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন বলে তাকে জানানো হয়।

তিনি অভিযোগ করে বলেন,তাৎক্ষণিক ভাবে আমাদের পরিবারের কাউকে না নিয়েই আগে থেকে ডেকে আনা একটি প্রাইভেটকারে টানা হেঁচড়া করে আমার ভাইকে সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এনাম মেডেকেলের মর্গে ভাইকে সনাক্ত করি।এসময় পোস্টমর্টেম ছাড়াই জোরপূর্বক জামাল হোসেনকে দাফন করতে বাধ্য করেন ফোরকান হাকিম ও তার লোকজন।

তিনি আরও জানান, প্রথমে তিনি ফোরকানের কথা শুনে এটিকে স্ট্রোক করে মারা গেছেন ভেবেই ভাইকে কবরস্থ করেন। পরে তাদের কথাবার্তায় ও মৃত্যুর আলামত দেখে তার বুঝতে বাকি থাকে না যে এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। ইতিপূর্বে ইমরানের ভাই জামাল হোসেন ফোরকান হাকিমের কাছে ২ লাখ টাকা পাওনা ছিলেন। পাওনা টাকা চাইলে বিভিন্ন সময় তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। প্রতিশোধ নিতে ফোরকান হাকিমের সঙ্গে লোকমান হাকিম, গোফরান হাকিম ও কাঞ্চন শিয়ালী ওরফে দীন মোহাম্মদ পূর্ব পরিকল্পিতভাবে জামাল হোসেনকে হত্যা করেছে। এর দুইদিন পর সাভার মডেল থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশের পরামর্শে আদালতে মামলা করেন বলে জানান নিহতের ভাই ও মামলার বাদী ইমরান হোসেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সাভার মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (ইন্টেলিজেন্স) আব্দুল্লা বিশ্বাস জানান, ইমরান হোসেন গোলদারের ভাই জামাল হোসেন গোলদার গত ১৮ সেপ্টেম্বর আদালতে ভাইয়ের মৃত্যুর জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। পরে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও সাভার আমলী আদালতে মামলাটি রুজু করে কবর থেকে লাশ তোলার নির্দেশ দেন। তদন্তের স্বার্থে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে লাশ তুলে মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে।

এ ঘটনায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এস এম রাসেল ইসলাম নূর বলেন, মৃত্যুর সময় থানায় কোন কিছুই জানানো হয়নি। মৃত্যুর দুইদিন পর নিহতের ভাইয়ের অভিযোগের প্রেক্ষিতে আজ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিতে ২৩ দিন পর আদালতের নির্দেশে লাশ উত্তোলন করে মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here